*অসুখ হলেই ওষুধ খেতে হয়, এ কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু সঠিক নিয়মে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করি না, ওষুধ খেতে আমরা যতটা তৎপর ওষুধ খাওয়ার নিয়ম মানতে ততটাই উদাসীন আমাদের এই অবহেলা জীবন রক্ষাকারী ওষুধকে করে তুলতে পারে জীবনবিনাশী বিষ, ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই যে অনিয়মটা করি, তা হলো চিকিৎসকের পরামর্শ না নেয়া, আমরা নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করি, কখনো আত্মীয়( Relatives), কখনো বন্ধুর পরামর্শ নিই, কখনো চিকিৎসকের চেয়ে ওষুধ বিক্রেতার ওপর বেশি নির্ভর করি, অমুক ঔষধ এ তমুক ভালো হয়েছিল, তাই আমিও ভালো হব এমন চিন্তা আমাদের মধ্যে কাজ করে কিন্তু লক্ষ্য এক হলেই অসুখ এক হবে এমন কোন কথা নেই, আবার একই রোগে একই ওষুধের মাত্রা রোগী ভেদে ভিন্ন হতে পারে, মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড বা শক্তি বাড়ানোর জন্য Vitamins খাই ভাতের চেয়ে বেশি, এসবের মারাত্মক কখনো জীবন বিনাশী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ
যদিও বা কখনো (বাধ্য হয়ে) চিকিৎসকের পরামর্শ নেই ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া বিধি-নিষেধ মানি কম সময় মতো ওষুধ খাওয়া খাওয়ার আগে না পরে তা বুঝে খাওয়া, পর্যাপ্ত জলপান করা, এসব আমরা খেয়াল রাখি না, বিশেষ করে এন্টিবায়োটিকের মাত্রার ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি উদাসীন থাকি, সবচেয়ে ভয়াবহ হল ওষুধ বন্ধ করে দেয়া, জ্বর ভালো হয়ে গেছে এন্টিবায়োটিক আর কি দরকার ভেবে নিজেরাই ওষুধ বন্ধ করে দিই, আবার অন্যদিকে কয়েকদিনে জ্বর ভালো না হলে ওষুধ ঠিক নাই ভেবে তা বন্ধ করে দিই এবং অন্য চিকিৎসকের কাছে নতুন ওষুধের প্রত্যাশায় যাই, যে সব অসুখে দীর্ঘদিন বা আজীবন ওষুধ খেতে হয় সেখানে আমরা অসুখ নিয়ন্ত্রণে এলেই তা বন্ধ করে দিই, বুঝতে চাইনা যে রোগ ভালো হয় নি, নিয়ন্ত্রণে আছে কেবল, একসময় লোকমুখে ক্যান্সারের ওষুধ শুনে বাতের ওষুধ বন্ধ করার ঘটনা প্রচার দেখা যেত, ওষধ শুরুর মতো বন্ধ করারও সময়ও আমরা নিয়ম মানিনা, যেসব ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করা যায় না, তা নিজেরাই হঠাৎ(Suddenly)বন্ধ করে দিই, Medicine নিয়ে অনাচারে কি ক্ষতি হতে পারে?
প্রথম কথা, যে রোগের (disease) জন্য ঔষধ সেবন করা তার উপশম হবে না, বরং খারাপ হতে পারে, ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু আবির্ভাব এক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার জীবাণুর বিরুদ্ধে (Against)এদের অকার্যকর করে দিচ্ছে, সঠিক এন্টিবায়োটিক দিয়ে যে রোগ শুরুতেই ভালো করা যেত, অপব্যবহারের কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না, নতুন দামি ঔষধ দরকার হচ্ছে, কখনো তাতেও কাজ হচ্ছে না, Specifically বলা যায় যক্ষার কথা যেখানে কমপক্ষে ছয় মাস ওষুধ খেতে হয়, অথচ অনেকেই কয়েক মাস খেয়ে ভালো হয়ে গেছি মনে করে তা বন্ধ করে দেয়, তখন তা মারাত্মক Multi-drug Resistance টিবি তে পরিণত হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন, আর্থিক দিকটাও বিবেচনা করা জরুরি যে চিকিৎসা এখন সুলভে হচ্ছে, অবিবেচকের মতো ওষুধ খেলে তা পরবর্তী সময়ে ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে, শুধু জীবাণু সংক্রমণ নয়, উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস ইত্যাদি অসুখেও মাঝেমধ্যে ওষুধের ব্যবহার উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে, নিয়মিত ওষুধ খেলেও যদি সেবনবিধি না মানা হয় তবে অনেক Medicine অকার্যকর হয়ে যায়, খালি পেটে খাওয়ার ওষুধ ভরা পেটে খেলে তা না খাওয়ার মতোই হবে, এছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই এক ওষুধ অন্য ওষুধের উপস্থিতিতে কাজ করে না, অজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে এসবMEdicineএকত্রে খেলে লাভ তো হবেই না বরং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, মনের মতো ওষুধ খাওয়ার আরেক সমস্যা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, একজন চিকিৎসক ভালো মত জানেন কোন ওষুধের কি সমস্যা, আর তাই তা কাকে দেয়া যাবে কাকে যাবে না, নিজে থেকে ওষুধ খেলে এসব বিবেচনা সম্ভব নয় তাই Side effect এর আশঙ্কা বেশি, ব্যথার ঔষধ খেয়ে পেট ফুটো হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে, মোটা( fat )হবার জন্য স্টেরয়েড খেয়ে অনেকেই মারাত্মক কুশিং সিনড্রোমে আক্রান্ত হন যা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়, প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ ঔষধ বন্ধ করেও অনেকে বিপদে পড়েন বিশেষ করে স্টেরয়েড হঠাৎ বন্ধ করেও অনেকে বিপদে পড়েন বিশেষ করে যা থেকে রোগী মারাও যেতে পারে, সাধারণ ঔষধ যা অনেক প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায় বিশেষ অবস্থায় তাও হতে পারে (Harmful)ক্ষতিকর আমরা অনেকেই জানি না যে ভিটামিন এ বা কৃমির ওষুধের মত সাধারন ঔষধ গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করে, লিভারের রোগীর জন্য প্যারাসিটামল-জাতীয় ঔষধ হতে পারে ক্ষতির কারণ, এই অবস্থার জন্য দায়ী আমরা সবাই, রোগী যেমন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বাহুল্য ভাবছেন, চিকিৎসক তেমনি রোগীকে অনেক সময় সঠিক পরামর্শ দেন না, চিকিৎসক রোগীকে ওষুধ দেওয়ার সময় সেই ওষুধের কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা রোগীকে বলা উচিত, তাহলে রোগীও সচেতন থাকবে ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রোগীদের যা মেনে চলা উচিত তা হলো শুধু চিকিৎসক পরামর্শ দিলেই ওষুধ সেবন করা যাবে,
*Special case:- (যেমন গর্ভাবস্থা, লিভারের রোগ, ইত্যাদি) সাধারণ ঔষধ বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া পাওয়া যায়, তাও চিকিৎসকের পরামর্শেই ব্যবহার করতে হবে,
*শুধু pharmacist এর কাছ থেকে ওষুধ কেনা উচিত, কেনার সময় তার মেয়াদকাল দেখে নিতে হবে, মনে রাখবেন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আপনার রোগ সারানোর পরিবর্তে ক্ষতি করতে পারে,
*Doctor Medicine খাওয়ার নিয়ম বলে দেবেন( কতটুকু ঔষধ, কতক্ষণ পর পর, কতদিন, খাবার আগে না পরে ইত্যাদি) তা মেনে সেবন করতে হবে, প্রয়োজনে তা লিখে রাখুন বা মনে রাখতে অন্যের (Help)সাহায্য নিন, নিজে থেকে ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা যাবে না,
*অনেকে একবার (Once) চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বারবার সেই ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনেন, এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে প্রথম ব্যবস্থাপত্রে যে ওষুধ যতদিন খেতে বলা হয়েছে ততদিনই খাওয়া যাবে, আবার একই অসুখ (illness) হলেও সেই একই ঔষধ কাজ নাও করতে পারে,
*সামান্যকারণেইপেটের ব্যথার ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই খাওয়া শুরু করবেন না
*নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না সুস্থ বোধ করলেও কোর্স সম্পন্ন করতে হবে কোন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
*একইসঙ্গে Allopathic ও অন্যান্য পদ্ধতির চিকিৎসা চালালে তা চিকিৎসককে জানানো উচিত,
*Medicine সব সময় আলো থেকে দূরে ঠান্ডা শুষ্ক স্থানে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন, কিছু কিছু ঔষধ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়, নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়, এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন,
*অনেক সময় দোকানিরা প্রেসক্রিপশন এর লেখা ওষুধ না দিয়ে শুধু বিক্রি করার জন্য অন্য কোম্পানির অন্য ঔষধ দিয়ে থাকেন, বলেন একই ওষুধ, এক্ষেত্রে রোগীদের সতর্ক থাকা উচিত এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্রে উল্লিখিত নামের ওষুধ কেনা উচিত,
*বাচ্চা ও বয়স্ক দের বেলায় আরও বেশি সতর্ক হতে হবে, তাদের বেলায় ওষুধের মাত্রা চোখের ড্রপ বা মলম এবং ইনজেকশন এর প্রয়োগ বিধির (যেমন মাংসে বা শিরায়) ব্যাপারে অতিরিক্ত সর্তকতা (Warning) অবলম্বন করতে হবে, এর সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ বিক্রেতার কর্তব্য প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করা, শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থে যেনতেনভাবে যে কোন ঔষধ বিক্রি না করা, কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা, দোকানে ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা ও সার্বিক তত্ত্বাবধান করা, ওষুধের অপব্যবহার, বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থেকে নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার
*****
No comments:
Post a Comment